(১) আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যাওয়ার সময়ের জরুরি ব্যাগ কী?
এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। যখন একটি দুর্যোগ আঘাত হানবে এবং আপনাকে অবশ্যই অন্যত্র সরে যেতে হবে, তখন অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আগেভাগেই গুছিয়ে রাখা একটি ব্যাগ থাকলে অনেক সুবিধা হয়। নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার সময় সাথে নেয়া জরুরি ব্যাগে কী কী অন্তর্ভুক্ত থাকা দরকার চলমান ধারাবাহিকে আমরা সেই ব্যাখ্যা দিচ্ছি। প্রথম পর্বে আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যাওয়ার সময়ের জরুরি ব্যাগ কী, আজ আমরা সেই ব্যাখ্যা আপনাদের দেবো।
আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যাওয়ার সময়ে এই জরুরি ব্যাগটি কাছাকাছি অবস্থিত আশ্রয়কেন্দ্রে বয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো যথেষ্ট ছোট এবং ওজনে হালকা হওয়া উচিত। ধরে নিন, ধ্বংসাবশেষ এড়িয়ে আপনাকে আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছাতে হবে, তখন আপনার উচিত হবে দুই হাত মুক্ত রাখার জন্য একটি পিঠের ব্যাগ ব্যবহার করা। এই ব্যাগের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী এসে না পৌঁছানো পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েকদিন থাকার মতো যথেষ্ট খাবার এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থাকা উচিত। প্রতিটি মানুষের জীবনযাত্রার উপর নির্ভর করে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে, তাই আপনার কী প্রয়োজন তা বিবেচনা করাটা গুরুত্বপূর্ণ এবং এগুলো আগেভাগেই প্রস্তুত করে রাখা দরকার।
তবে খেয়াল রাখবেন অতিরিক্ত বেশি জিনিসপত্র ব্যাগের মধ্যে ঢুকাবেন না। আপনি যেন আশপাশে চলাচল করতে পারেন সেই মতো হালকা করে ব্যাগ গোছানো উচিত।
এই তথ্যগুলো ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।
(২) দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য
এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার সময় সাথে নেয়া জরুরি ব্যাগে কী কী অন্তর্ভুক্ত থাকা দরকার চলমান ধারাবাহিকে আমরা সেই ব্যাখ্যা দিচ্ছি। আজ আমরা দৈনন্দিন জীবনের জরুরি প্রয়োজনীয় যে সব পণ্য আপনার ব্যাগে রাখা দরকার সেই বিষয়ে জানাবো।
পানি ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। দেহে পানির প্রবাহ বজায় রাখার জন্যই কেবল পানির প্রয়োজন হয় না; আমাদের হাত ও আঙ্গুল ধোয়া এবং ক্ষত পরিষ্কার রাখার জন্যেও পানি দরকার। আপনার সরে যাওয়ার জরুরি ব্যাগে কম পক্ষে এক লিটার পানি থাকতে হবে। ৫০০ মিলিলিটারের পান করার দুটি বোতল রাখা সুবিধাজনক হবে। খাদ্যের বেলায় ব্যাগ এবং টিনজাত খাবার আমরা সুপারিশ করবো, যা দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ করা যায় এবং আমিষ ও ভিটামিন যেখানে থাকে। অস্থায়ী টয়লেট আশ্রয়কেন্দ্রে বসিয়ে নিতে কয়েক দিন সময় লেগে যেতে পারে। ফলে বহনযোগ্য টয়লেটও হচ্ছে আরেকটি আবশ্যকীয় পণ্য। সামান্য পরিমাণ পানি কেবল আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। তাই, স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য অ্যালকোহল যুক্ত জীবাণুনাশক, ভেজা টিস্যু ও মাস্কও কাছে রাখা দরকার। “টুথপেস্ট শিট” পানি ছাড়া দাঁত ব্রাশ করতে আপনাকে সাহায্য করবে। আমরা আরও যা সুপারিশ করবো তা হলো, অন্তর্বাস, মাথায় যুক্ত রাখার টর্চ এবং বহযোগ্য একটি রেডিও যেনো আপনার ব্যাগে থাকে। ওষুধ এবং নারীর ব্যবহারের স্যানিটারি সামগ্রীর মতো কাজে লাগার বিভিন্ন জিনিসপত্রও ব্যাগে আপনার রাখা দরকার।
এই তথ্যগুলো ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।
(৩) শীতকালে সরে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য
এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার সময় সাথে নেয়া জরুরি ব্যাগে কী কী অন্তর্ভুক্ত থাকা দরকার চলমান ধারাবাহিকে আমরা সেই ব্যাখ্যা দিচ্ছি। আজ আমরা শীতকালে আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যেতে হলে কী ধরনের পণ্যের প্রয়োজন হবে সেই বিষয়ে আপনাদের জানাবো।
বছরের কোন সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যাচ্ছেন তার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের প্রয়োজন হবে আপনার। শীতকালে তাপমাত্রা হ্রাস পেলে হাইপোথার্মিয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। শরীরের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে দেহের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়, যার ফলে এই জটিলতা হতে দেখা যায়। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় হাইপোথার্মিয়া এমনকি প্রাণঘাতীও হতে পারে। শীতের কবল থেকে আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে এমন পোশাক জরুরি ব্যাগে রাখা নিশ্চিত করুন। আপনার পোশাক, মাথার টুপি, হাতের গ্লাভস এবং মোজা, এসব কিছুই বেশ মোটা হতে হবে যাতে করে শরীর থেকে তাপমাত্রা বেরিয়ে না যায়। এছাড়াও শীতকালে আশ্রয়কেন্দ্রে ঘুমানোর সময় খুব ঠাণ্ডা লাগতে পারে। শীতের রাতের প্রস্তুতি হিসাবে শীতকালীন একটি স্লিপিং ব্যাগ এবং অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে তৈরি গরম কম্বলের প্রয়োজন হবে আপনার। স্কুলের জিমনেসিয়াম বা শরীর চর্চা করার কক্ষে আশ্রয় নিলে সেখানকার ঠাণ্ডা মেঝের কথা ভেবে ঘরে পড়ার চটি সঙ্গে রাখলে সুবিধা হবে। একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয় এমন হিট প্যাক বা গরম করার প্যাক সঙ্গে রাখলে তা শরীর গরম রাখতে সাহায্য করবে।
এই তথ্যগুলো ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।
(৪) নারী ও শিশুদের জন্য অত্যাবশ্যক সামগ্রী
এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার সময় সাথে নেয়া জরুরি ব্যাগে কী কী অন্তর্ভুক্ত থাকা দরকার চলমান ধারাবাহিকে আমরা সেই ব্যাখ্যা দিচ্ছি। আজ আমরা নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে আলোচনা করবো।
দুর্যোগের সময় মনের ওপর যে প্রচণ্ড আঘাত বা চাপ পড়ে, তার ফলে অনেক সময় মহিলাদের আকস্মিক ঋতুস্রাব আরম্ভ হয়ে যায়। তাই আপদকালীন ব্যাগে ভরে রাখার জন্য একটি অত্যাবশ্যক পণ্য হচ্ছে স্যানিটারি প্যাড। শরীরে আঘাতজনিত রক্তক্ষরণ বন্ধেও স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করা যায়। অতএব ব্যাগে এই প্যাড একটু বেশি করেই ভরে রাখতে সুপারিশ করা হচ্ছে। ব্যাগে প্যান্টি লাইনার রাখার সুপারিশও করা হচ্ছে, কারণ যখন নিয়মিত অন্তর্বাস বদলানোর সুবিধা থাকে না, তখন প্যান্টি লাইনার শারীরিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। অস্বচ্ছ প্লাস্টিক ব্যাগেরও যোগাড় রাখা যেতে পারে। যেহেতু এই ব্যাগের ভেতরে কী আছে বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায় না, তাই এর মধ্যে অন্তর্বাস এবং ময়লা জিনিসপত্র’সহ এমন কিছু রাখতে পারেন যা আপনি চান না অন্য কেউ দেখতে পাক। ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য লোশন, ময়েশ্চারাইজার ও ক্লিনিং শিটের মতো যেসব জিনিস আপনি সাধারণত ব্যবহার করেন, ব্যাগের মধ্যে সেগুলোও রাখতে পারেন। ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় থাকলে আপনার অস্বস্তি কম হবে, আপনি শান্ত থাকতে পারবেন।
ছোট বাচ্চা যদি সাথে থাকে তাহলে ব্যাগ প্রস্তুত রাখতে হবে এমন সব জিনিস দিয়ে যা সাধারণত আপনি বাচ্চা নিয়ে বাইরে বেরোনোর সময় সঙ্গে রাখেন। ব্যাগে একটা কাপড় ভরে রাখলে ভালো হয় যেটা বাচ্চাকে স্তন্যপান করানোর সময় আড়াল করতে কাজে আসবে। কাগজের গ্লাস রাখা যেতে পারে দুধের বোতলের সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। তাছাড়া জীবজন্তুর পুতুল’সহ আপনার বাচ্চার পছন্দের খেলনাও ব্যাগে রাখবেন, যাতে সে এগুলো দিয়ে খেলাধুলা করে মন প্রফুল্ল রাখতে পারে।
এই তথ্যগুলো ফেব্রুয়ারি মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।
(৫) পোষা প্রাণি’সহ আশ্রয় গ্রহণকারীদের যা প্রয়োজন
এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার সময় সাথে নেয়া জরুরি ব্যাগে কী কী অন্তর্ভুক্ত থাকা দরকার চলমান ধারাবাহিকে আমরা সেই ব্যাখ্যা দিচ্ছি। আজ আমরা পোষা প্রাণী’সহ নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার সময় আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসের উপর আলোচনা করবো।
অতীতের দুর্যোগগুলোতে, অনেক বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিই নিজেদের বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কারণ তখন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পোষা প্রাণি নেয়ার অনুমতি ছিল না। পরিবেশ মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশিকা তৈরি করেছে, যাতে পোষা প্রাণি’সহ নিজেদের বাড়ির বাইরে আশ্রয় নিতে যাওয়া লোকজনের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শের উল্লেখ আছে। ক্রমবর্ধমান সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র এখন পোষা প্রাণিদের গ্রহণ করছে, যদিও পোষা প্রাণি নিয়ে আসা লোকজনের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলী মেনে চলার বাধ্যবাধকতা সেখানে রয়েছে। আপনার এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রটি পোষা প্রাণিদের গ্রহণ করে কি না, তা আগে থেকেই জেনে নিলে ভালো হয় এবং সেই অনুযায়ী, আপনার জরুরিভিত্তিতে সরে যাওয়ার ব্যাগে এসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো রাখুন।
পানি এবং পোষা প্রাণির খাদ্য একটি অতীব প্রয়োজনীয় জিনিস। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকায়, পোষা প্রাণির মালিকদের তাদের প্রাণিদের জন্য কমপক্ষে পাঁচ দিনের খাবার প্রস্তুত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। পোষা প্রাণিদের জন্য টয়লেট শীটও একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। র্যাপিং বা কিছু মোড়ানোর কাপড়গুলোও কাজে আসবে কারণ আলো এবং শব্দের প্রবেশ বন্ধ করতে খাঁচা ঢেকে রাখার কাজে আপনি এগুলোকে ব্যবহার করতে পারেন। এটি প্রাণিদের অপরিচিত পরিবেশে শান্ত থাকতে সাহায্য করবে। জালের ন্যায় লন্ড্রি ব্যাগ রাখাও সুবিধাজনক হবে। আপনি আপনার বিড়ালটিকে এই ব্যাগে রাখতে পারবেন যাতে খাঁচা থেকে বের করার সময় এটি পালিয়ে না যায়।
এই তথ্যগুলো ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।
(৬) একটি ব্যাগের সঠিক ওজন এবং রাখার স্থান
এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার সময় সাথে নেয়া জরুরি ব্যাগে কী কী অন্তর্ভুক্ত থাকা দরকার চলমান ধারাবাহিকে আমরা সেই ব্যাখ্যা দিচ্ছি। আজ আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যেতে হলে একটি ব্যাগের সঠিক ওজন কত হবে, এটি কোথায় রাখতে হবে এবং ভিতরের জিনিসপত্রের নিয়মিত পরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্য আপনাদের জানাবো।
আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যাওয়ার সময় সাথে নেয়া জরুরি ব্যাগে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখার পরামর্শ আপনাকে দেয়া হচ্ছে। একটি ভারী ব্যাগ যেটি আপনার আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যাওয়াকে ধীর করে দিতে পারে, তা আপনার জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। একজন পুরুষের জন্য ১৫ কেজির মতো এবং একজন নারীর জন্য ১০ কেজির মতো ওজনের একটি ব্যাগ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এই ব্যাগের ধারণ ক্ষমতা অবশ্যই ২০ থেকে ৩০ লিটারের মতো হওয়া উচিত।
আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যাওয়ার সময় সাথে নেয়া জরুরি ব্যাগ অবশ্যই এমন একটি স্থানে রাখা উচিত যেখানে আপনি যেকোন সময়ে সহজেই যেতে পারেন, যেমন ধরুন, আপনার শোয়ার ঘর কিংবা ঘরে ঢোকার মুখের কাছে। যদি আপনি আপনার ব্যাগটি ক্লোজেট বা অন্য আসবাবপত্রের মধ্যে রাখেন, তাহলে আপনি যখন দরজা খুলতে পারবেন না তখন আপনি ব্যাগটি সাথে নিতে সক্ষম নাও হতে পারেন।
আপনাকে নিয়মিত ভিত্তিতে এই ব্যাগের ভিতরের জিনিসপত্র পরীক্ষা করে দেখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। মৌসুমের উপর ভিত্তি করে ব্যাগের ভিতরের জিনিসপত্র পরিবর্তন এবং পানি ও খাবারের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ পরীক্ষা করে দেখার দিকে খেয়াল রাখবেন।
এই তথ্যগুলো ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।